Translate

অধ্যায় ২: সংখ্যাযোগ

অধ্যায় ২
সংখ্যাযোগ
শ্লোক
1. সঞ্জয় বললেন- অর্জুনকে এইভাবে অনুতপ্ত ব্যাকুল এবং অশ্রুসিক্ত দেখে কৃপায় আবিষ্ট হয়ে মধুসূদন শ্রীকৃষ্ণ বন্ধুভাবে অতি মিষ্টিস্বরে এই কথাগুলি বললেন।

2. ভগবান বললেন- প্রিয় অর্জুন, এই ঘোর সংঙ্কটময় যুদ্ধস্থলে যারা প্রকৃত জীবনের মূল্য বোঝেনা সেসব অনার্যের মত শোকানল তোমার হৃদয়ে কিভাবে প্রজ্জলিত হল। এই রকমের মনোভাব তোমাকে স্বর্গলোকে উন্নীত করবে না। পক্ষান্তরে তোমার সমস্ত যশরাশি বিনষ্ট হবে।


3. হে পার্থ, এই অসন্মানজনক ক্লীবত্তের বশবর্তী হয়ো না, এই ধরনের আচরণ তোমার পক্ষে অনুচিত। হে পরন্তপ, হৃদয়ের দুর্বলতা পরিত্যাগ করে উঠে দাড়াও।

4. অর্জুন বললেন -হে মধুসূদন, এই যুদ্ধক্ষেত্রে ভীষ্ম এবং দ্রোণের মত পরম পূজনীয় ব্যক্তিদের কেমন করে আমি বাণের দ্বারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করব।

5. আমার মহানুভব শিক্ষাগুরুদের জীবন হানি করে এই জগৎ ভোগ করার থেকে বরং ভিক্ষা করে জীবন ধারণ করা ভাল। তারা জড়জাগতিক লোভার্থী হলেও আমার গুরুজন। তাদের হত্যা করা হলে যুদ্ধলব্ধ ভোগ যে রক্তমাখা হবে।

6. তাদের জয় করা ভাল না তাদের দ্বারা পরাজিত হওয়া ভাল তাও আমি বুঝতে পারছি না।এই রণাঙ্গণে আমাদের সামনে উপস্থিত হয়েছে ধৃতরাষ্ট্রের যে পুত্রেরা তাদের হত্যা করা হলে আমাদের আর বেঁচে থাকতে ইচ্ছা করবে না।

7. কার্পণ্যজনিত দুর্বলতার প্রভাবে আমি এখন কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়েছি, আমার কর্তব্য সম্বন্ধে বিভ্রান্ত হয়ে আমি তোমাকে জিজ্ঞাসা করছি- এখন কি করা আমার পক্ষে শ্রেয়স্কর। এখন আমি তোমার শিষ্য, সর্বতভাবে তোমার শ্বরণাগত, দয়া করে তুমি আমাকে শিক্ষা দাও।

8. আমার ইন্দ্রিয়গুলিকে জ্বালিয়ে দিচ্ছে যে শোক তা কিভাবে আমি দূর করব তা আমি জানি না। স্বর্গের দেবতাদের মত আধিপত্য নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বীতা বিহীন রাজ্য এই পৃথিবীতে লাভ করলেও আমার এই শোকের বিনাশ হবে না।

9. সঞ্জয় বললেন- এই ভাবে তার মনোভাব ব্যক্ত করে গুড়াকেশ অর্জুন তখন হৃষীকেশকে বললেন, হে গোবিন্দ আমি যুদ্ধ করব না এবং এই বলে তিনি মৌন হলেন।

10. হে ভারতবংশীয় ধৃতরাষ্ট্র, সে সময় স্মিত হেসে শ্রীকৃষ্ণ উভয়পক্ষ ও সৈন্যদের মাঝখানে বিষাদগ্রস্ত অর্জুনকে এই কথা বললেন

11. ভগবান বললেন- তুমি প্রজ্ঞের মত কথা বলছ অথচ যে বিষয়ে শোক করা উচিত নয় সে বিষয়ে শোক করছ। যারা যথার্থই পন্ডিত তারা কখনো জীবিত বা মৃত কারোর জন্য শোক করে না।

12. এমন কোন সময় ছিল না যখন আমি, তুমি এবং এই সমস্ত রাজারা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও দেহী কখনো আমাদের অস্তিত্ব বিনষ্ট হবে না ।

13. দেহী যে ভাবে কৌমার যৌবন এবং জরার মাধ্যমে দেহের রুপ পরিবর্তন করে চলে, মৃত্যুকালে ঐ দেহী এক দেহ থেকে অন্য কোন দেহে দেহন্তারীত হয়। স্থিত প্রজ্ঞ পন্ডিতেরা কখনো এই পরিবর্তনে মূহ্যমান হয় না ।

14. হে কৌন্তেয়, ইন্দ্রিয়ের সঙ্গে বিষয়ের সংযোগের ফলে যে অনিত্য সুখ ও দুঃখের অনুভব হয় সেগুলি যেন শীত এবং গ্রীষ্ম ঋতুর গমনা-গমনের মত। হে ভরতকুল প্রদীপ, সেই ইন্দ্রিয় অনুভূতির দ্বারা প্রভাবিত না হয়ে সেগুলি সহ্য করার চেষ্টা কর।

15. হে পুরুষশ্রেষ্ট, যে জ্ঞানী ব্যক্তি সুখ-দুঃখ ,শীত-উষ্ণ আদি দ্বন্ধে বিচলিত হন না তিনি অমৃত তত্ত্বের প্রকৃত অধিকারী হন।

16. যারা তত্ত্বদ্রষ্টা তারা সিদ্ধান্ত করেছেন যে, অনিত্য জড়বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্যবস্তুর আত্মার কখনও বিনাশ হয় না। তত্ত্বদ্রষ্টাগণ উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরুপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।

17. সমস্ত শরীরে পরিব্যাপ্ত রয়েছে যে অক্ষয় আত্মা, যেনে রেখ তাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।

18. এই সমস্ত শরীর অনিত্য কিন্তু শরীরী আত্মা অবিনাশী। সেই আত্মার অতি সুক্ষ্মত্ব-হেতু অপরিমেয়। অতএব হে ভারত, তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।

19. যিনি জীবসত্তাকে হন্তা বলে মনে করেন কিংবা যিনি একে নিহত বলে ভাবেন তারা উভয়েই আত্মার প্রকৃত স্বরুপ জানেন না। কারণ আত্মা কাউকে হত্যা করে না বা কারোর দ্বারা নিহত হয় না।

20. আত্মার কখনো জন্ম হয় না বা মৃত্যু হয় না। অথবা  পুণঃ পুণঃ তার উৎপত্তি বা বৃদ্ধি হয় না, তিনি জন্ম রহিত শাশ্বত, নিত্য এবং নবীন। শরীর  নষ্ট হলেও আত্মা কখনো বিনষ্ট হয় না।

21. হে পার্থ, যিনি এই আত্মাকে অবিনাশী, নিত্য, শাশ্বত, জন্ম-রহিত ও অক্ষয় বলে জানেন তিনি কি প্রকারে কারো হত্যা করেন বা কারো হত্যা করান? অবিনাশীর বিনাশ অসম্ভব।

22. মানুষ যেমন জীর্ণ বস্ত্র পরিত্যাগ করে নূতন বস্ত্র পরিধান করে দেহীও তেমনই জীর্ণ শরীর ত্যাগ করে নতুন দেহ ধারণ করে।

23. আত্মাকে অস্ত্রের দ্বারা কাটা যায় না, আগুনে পোড়ান যায় না, জলে ভেজানো যায় না অথবা হাওয়ায় শুকানোও যায় না।

24. এই আত্মা অচ্ছেদ্য, অদাহ্য, অক্লেদ্য। তিনি চিরস্থায়ী, সর্বব্যাপ্ত, অপরিবর্তনীয়, অচল এবং সনাতন।

25. এই আত্মা অব্যক্ত, অচিন্ত ও অবিকারী বলে শাস্ত্রে উক্ত হয়েছে। অতএব, এই সনাতন স্বরুপ অবগত হয়ে তুমি দেহীদের প্রতি শোক পরিত্যাগ কর

26. হে মহাবাহো, আর তুমি যদি মনে কর যে আত্মার বারবার জন্ম হয় বা মৃত্যু হয় তা হলেও তোমার শোক করার কোন কারণ নেই।

27. যার জন্ম হয়েছে, তার মৃত্যু অবশ্যম্ভাবী এবং যার মৃত্যু হয়েছে, তার জন্মও অবশ্যম্ভাবী। অতএব তোমার কর্তব্য সম্পাদন করার সময় শোক করা উচিত নয়।

28. হে ভারত, সমস্ত জীব উৎপন্ন হওয়ার আগে অপ্রকাশিত ছিল। তাদের স্থিতিকালে প্রকাশিত থাকে এবং বিনাশের পর আবার অপ্রকাশিত হয়ে যায়। সুতরাং সেজন্য শোক করার কি কারণ।

29. কেউ আত্মাকে আশ্চর্য ভাবে দর্শন করেন, কেউ আশ্চর্য ভাবে বর্ণনা করেন, আবার কেউ আশ্চর্য জ্ঞানে শ্রবণ করেন আর কেউ জেনে শুনেও বুঝতে পারেন না।

30. হে ভারত, প্রাণিদের দেহে অবস্থিত আত্মা সর্বদাই অবাধ্য। সেজন্য কোন প্রাণীর দেহত্যাগে তোমার শোক করা উচিত নয়।

31. ক্ষত্রিয় রুপে তোমার স্বধর্ম বিবেচনা করেও তোমার দ্বিধাগ্রস্থ হওয়া উচিত্ নয়। কারণ ধর্ম রক্ষার্থে যুদ্ধ করা থেকে ক্ষত্রিয়ের পক্ষে মঙ্গলকর আর কিছুই নাই।

32. হে পার্থ, স্বর্গদ্বার উন্মোচনকারী এই প্রকার ধর্মযুদ্ধে অংশগ্রহণ করার সুযোগ না চাইতেই যে সব ক্ষত্রিয়ের কাছে আসে, তারা সুখী হন।

33. কিন্তু তুমি যদি এই ধর্মযুদ্ধ না কর তা হলে তোমার স্বীয়কীর্তি থেকে ভ্রষ্ট হয়ে পাপ ভোগ করবে।

34. সমস্ত লোক তোমার কীর্তিহীনতার কথা বলবে এবং যে কোন মর্যাদাবান লোকের পক্ষে মৃত্যু অপেক্ষাও অত্যন্ত ক্ষতিকর এই অমর্যাদা।

35. সমস্ত মহারথীরা মনে করবেন, যে তুমি ভয় পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছ এবং তুমি যাদের কাছে সম্মানীত ছিলে তারা তোমাকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য জ্ঞান করবে।

36. তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলবে। তার চেয়ে অধিকতর দুঃখজনক তোমার পক্ষে কি হতে পারে।

37. হে কুন্তীপুত্র, এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্বর্গলাভ করবে আর জয়ী হলে রাজ্যসুখ ভোগ করবে অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ় সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।

38. সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি , জয়-পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে যুদ্ধ করলে তোমাকে পাপভোগী হতে হবে না।

39. হে পার্থ, আমি তোমাকে সাংখ্যযোগের কথা বললাম এখন ভক্তিযোগ সম্বন্ধে বুদ্ধির কথা শ্রবণ কর যার প্রভাবে তুমি কর্ম-বন্ধন থেকে মুক্ত হবে।

40. ভক্তিযোগের অনুশীলন কখনও ব্যর্থ হয় না এবং তার কোন ক্ষয় নাই। তার স্বল্প অনুষ্ঠানও অনুষ্ঠান দাতাকে সংসাররুপ মহাভয় থেকে পরিত্রাণ করে।

41. যারা এই পথ অবলম্বন করেছে তাদের নিশ্চয়াত্মিকা বুদ্ধি একনিষ্ঠ। হে কুরুনন্দন, অস্থিরচিত্ত সকাম ব্যক্তিদের বুদ্ধি বহুশাখা বিশিষ্ট ও বহুমুখী।

42. বিবেক বর্জিত লোকেরাই বেদের পুস্পিত বাক্যে আসক্ত হয়ে স্বর্গ সুখভোগ, উচ্চকুলে জন্ম, ক্ষমতা লাভ ইত্যাদি সকাম কর্মকেই জীবনের চরম উদ্দেশ্য বলে মনে করে। 

43. ইন্দ্রিয় সুখভোগ এবং ঐশ্বর্যের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তারা বলে যে তার উর্ধ্বে আর কেউ নাই।

44. যারা ভোগ ঐশ্বর্য্য সুখে আসক্ত সেই সমস্ত বিবেক বর্জিত ব্যক্তিদের বুদ্ধি সমাধি অর্থ্যাৎ ভগবানের একনিষ্ঠতা লাভ হয় না।

45. বেদে প্রধাণত জড় প্রকৃতির তিনটি গুণ সম্বন্ধেই বলা হয়েছে। হে অর্জুন, তুমি সেই গুণগুলিকে অতিক্রম করে নির্গুণস্তরে অধিষ্ঠিত হও। সমস্ত দ্বন্দ্ব থেকে মুক্ত হও এবং লাভ ক্ষতি ও আত্মরক্ষার দুশ্চিন্তা থেকে মুক্ত হয়ে আধ্যাত্ম চেতনায় অধিষ্ঠিত হও।

46. ক্ষুদ্র জলাশয়ে যে সমস্ত কার্য সাধিত হয় সেগুলি যেমন বৃহৎ জলাশয় থেকে আপনা হতেই সাধিত হয়ে যায়, তেমনই ভগবানের উপসনার মাধ্যমে যিনি পরমব্রহ্মের জ্ঞান লাভ করে সব কিছুর উদ্দেশ্য উপলব্ধি করেছেন তার কাছে সমস্ত বেদের উদ্দেশ্য সাধিত হয়েছে।

47. স্বধর্ম বিহিত কর্মে তোমার অধিকার আছে কিন্তু কোন কর্মফলে তোমার অধিকার নাই। কখনো নিজেকে কর্মফলের হেতু মনে করো না এবং কখনো স্বধর্মেও আচরন থেকে বিরত হয়ো না।

48. হে অর্জুন, ফলভোগের কামনা পরিত্যাগ করে ভক্তি যোগস্থ্য হয়ে স্বধর্ম বিহিত কর্মাচরণ কর। কর্মের সিদ্ধি-অসিদ্ধি সম্বন্ধে যে সমস্ত বুদ্ধি তাকেই বুদ্ধিযোগ বলা হয়।

49. হে ধনঞ্জয়, বুদ্ধিযোগ দ্বারা ভক্তির অনুশীলন করে সকাম কর্ম থেকে দূরে থাক। যারা কর্মের ফল ভোগ করতে চায় তারা কৃপণ।

50. যিনি ভগবত্ ভক্তির অনুশীলন করেন তিনি এই জীবনেই পাপ-পুণ্য উভয় থেকে মুক্ত হন। সুতরাং হে অর্জুন, তুমি নিস্কাম কর্মযোগের অনুশীলন কর সেটাই হল সর্বাঙ্গীণ কর্মকৌশল।

51. মনিষীগণ ভগবানের সেবায় যুক্ত হয়ে ভগবানের শ্বরণাগত হন। কর্মজাত ফল ত্যাগ করে জন্মমৃত্যুর বন্ধন থেকে মুক্ত হন।এইভাবে তারা সমস্ত দুঃখ দুর্দশা থেকে মুক্ত হন।

52. এইভাবে পরমেশ্বর ভগবানের উপর অর্পিত নিষ্কাম কর্ম অভ্যাস করতে করতে তোমার বুদ্ধি মোহরুপ গভীর অরণ্যকে সম্পূর্নরুপে অতিক্রম করবে, তখন তুমি যা কিছু শুনেছ সেই সবের প্রতি সম্পূর্ণরুপে নিরপেক্ষ হয়ে বিশুদ্ধ ভক্তি সাধনে প্রবৃত্ত হবে।

53. তোমার বুদ্ধি যখন বেদের ভাষার দ্বারা আর বিচলিত হবে না তখন তুমি দিব্যজ্ঞান লাভ করে ভক্তিযোগে অধিষ্ঠিত হবে।

54. অর্জুন জিজ্ঞাসা করলেন- হে কেশব, স্থিতপ্রজ্ঞ এবং অচলাবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষের লক্ষণ কী? তিনি কিভাবে কথা বলেন, কিভাবে অবস্থান করেন এবং কিভাবেই বা তিনি আচরণ করেন।

55. ভগবান বললেন-হে পার্থ মানুষ যখন মানসিক জল্পনা কল্পনা থেকে উদ্ভূত সমস্ত মনোগত কাম পরিত্যাগ করে এবং তার মন যখন আত্মাতেই পুর্ণ পরিতৃপ্তি লাভ করে তখনই তাকে স্থিতপ্রজ্ঞ বলা হয়।

56. ত্রিতাপ দুঃখ উপস্থিত হলেও যার মন উদ্বিগ্ন হয় না, সুখ উপস্থিত হলেও যার স্পৃহা হয়না এবং যিনি অনুরাগ, ভয় ও ক্রোধ থেকে মুক্ত তিনিই স্থিতধী অর্থাৎ স্থিতপ্রজ্ঞ।

57. জড়জগতে যিনি সমস্থ জড়বিষয়ে আসক্তি রহিত, যিনি প্রিয় বস্তু লাভে আনন্দিত হন না এবং অপ্রিয় বিষয় উপস্থিত হলে দুঃখিত হন না তার চেতনা পুর্ণজ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

58. কর্ম যেমন তার অঙ্গসমূহ, তার কঠিন বহিরাবরণের মধ্যে সংঙ্কুচিত করে, তেমনই যে ব্যক্তি তার ইন্দ্রিয়গুলিকে ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে প্রত্যাহার করে নিতে পারেন তার চেতনা চিন্ময় জ্ঞানে প্রতিষ্ঠিত।

59. দেহবিশিষ্ট জীব ইন্দ্রিয় সুখভোগ থেকে নিবৃত হতে পারে কিন্তু তবুও ইন্দ্রিয় সুখভোগের আসক্তি থেকে যায়। কিন্তু উচ্চতর স্বাধ আস্বাদন করার ফলে সে বিষয়-তৃষ্ণা থেকে তিনি চিরতরে নিবৃত্ত হন।

60. হে কৌন্তেয়, ইন্দ্রিয়সমুহ এত বলবান এবং ক্ষোভকারী যে তারা অতি যত্নশীল বিবেকসম্পন্ন পুরুষের মনকেও বলপূর্বক হরণ করে, বিচলিত করে দেয়।

61. যিনি আমার প্রতি উত্তম ভক্তিপরায়ণ হয়ে তার ইন্দ্রিয়গুলিকে সম্পূর্নরুপে বশীভূত করেছেন তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।

62. ইন্দ্রিয় বিষয় চিন্তা করতে করতে মানুষের আসক্তি জন্মায়, আসক্তি থেকে কামনার উদয় হয় এবং কামনা থেকে ক্রোধ উৎপন্ন হয়। 

63. ক্রোধ থেকে সম্মোহ, সম্মোহ থেকে স্মৃতি বিভ্রম, স্মৃতি বিভ্রম থেকে বুদ্ধিনাশ হওয়ার ফলে সর্বনাশ হয়। এবং মানুষ পুনরায় জড়জগতের অন্ধকূপে পতিত হয়।

64. সংযতচিত্ত মানুষ প্রিয়বস্তুতে স্বাভাবিক আসক্তি ও অপ্রিয় বস্তুতে স্বাভাবিক বিদ্বেষ থেকে মুক্ত হয়ে তার বশীভূত ইন্দ্রিয় দ্বারা ভগবদ্ উক্তির অনুশীলন করে ভগবানের কৃপা লাভ করে।

65. চিন্ময় চেতনায় অধিষ্ঠিত হওয়ার ফলে তখন তার জড়জগতের ত্রিতাপ দুঃখ থাকে না, এইভাবে প্রসন্নতা লাভ করার ফলে বুদ্ধি স্থির হয়।

66. যে ব্যক্তি কৃষ্ণ ভাবনায় যুক্ত নন তার চিত্ত সংযত নয় এবং তার পরমার্থিক বুদ্ধি থাকতে পারে না। আর পরমার্থ চিন্তাশুন্য ব্যক্তির বিষয় তৃষ্ণার বিরতি নেই। এই রকম বিষয়-তৃষ্ণাক্লিষ্ট ব্যক্তির প্রকৃত সুখ কোথায়?

67. প্রতিকূল বায়ু নৌকাকে যেমন অস্থির করে তেমনই সদা বিচরণকারী যেকোন একটি মাত্র ইন্দ্রিয়ের আকর্ষণেও মন অসংযত ব্যক্তির প্রজ্ঞাকে হরণ করতে পারে।

68. সুতরাং হে মহাবাহো, যার ইন্দ্রিয়গুলি ইন্দ্রিয়ের বিষয় থেকে সর্বপ্রকার নিবৃত্ত হয়েছে তিনিই স্থিতপ্রজ্ঞ।

69. সমস্ত জীবের পক্ষে যা রাত্রিস্বরুপ, স্থিতপ্রজ্ঞ সেই রাত্রিতে জাগরিত থেকে আত্মবুদ্ধিনিষ্ঠ আনন্দকে সাক্ষাৎ অনুভব করেন।

70. বিষয়কামী ব্যক্তি কখনও শান্তি লাভ করে না। জলরাশি যেমন সদা পরিপূর্ণ সমুদ্রে প্রবেশ করেও তাকে ক্ষোভিত করতে পারে না, কামসমূহও তেমন স্থিতপ্রজ্ঞ ব্যক্তিতে প্রবিষ্ট হয়েও তাকে বিক্ষুব্ধ করতে পারেনা অতএব তিনিই শান্তি লাভ করেন।

71. যে ব্যক্তি সমস্ত কামনা বাসনা পরিত্যাগ করে জড়বিষয়ের প্রতি নিঃস্পৃহ হয়ে নিরহঙ্কার এবং মমত্ত্ব বোধ রহিত হয়ে বিচরণ করেন তিনিই প্রকৃত শান্তি লাভ করেন।

72. এই প্রকার স্থিতিকেই ব্রহ্মস্থিতি বলে। হে পার্থ, যিনি এই স্থিতি লাভ করেন তিনি মোহ প্রাপ্ত হন না । জীবনের অন্তিম সময় তিনি এই জড়জগতের বন্ধন মুক্ত হয়ে ব্রহ্মানন্দ লাভ করেন।




No comments:

জমি জমা

 = ''খতিয়ান'' কি? = ''সি এস খতিয়ান'' কি? = ''এস এ খতিয়ান'' কি? = ''আর এস খতিয়ান'...